"তামাক সেবন বা ধূমপান ক্যান্সারের কারণ" বা "তামাক সেবন বা ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর", "ধূমপান মৃত্যু ঘটায়" - আমরা সকলেই এই সতর্কতা বার্তাগুলোর সাথে পরিচিত। তবে, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই এই বার্তাটি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেনি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি বছর তামাক সেবনের ফলে প্রায় ৮o লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৬১,২০০ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে তামাক সেবন থেকে সৃষ্ট জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে। তামাকের ব্যবহার এবং এর ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর ৩১ মে "বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস" পালন করার ঘোষণা দিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপায়ীরা দাবি করেছেন যে তামাক ও ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া সত্ত্বেও ধূমপান ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি।
"বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস" পালনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্বব্যাপী ধূমপায়ীদের ধূমপান ছেড়ে দেয়ার প্রয়াসে তাদের সহায়তা ও অনুপ্রাণিত করা। এই লক্ষ্যে প্রতিবছর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মশালা, গোলটেবিল বৈঠক, আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, কার্টুনচিত্রের মাধ্যমে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব এবং ধূমপানমুক্ত জীবনযাপনের উপকারী দিকগুলো উপস্থাপন করা হয়। ২০২১ সালে করোনা মহামারীর মধ্যেও এ দিনটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। ভার্চুয়াল আলোচনা সভা এবং ওয়েবিনারের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দিনটি আরো বেশি গুরুত্বসহ পালন করা হয়েছে। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট স্লোগান বা মূলমন্ত্র নির্ধারণ করা হয় দিনটি পালনের জন্য। এটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ধূমপানের ক্ষতিকর অভ্যাসটি ধীরে ধীরে ত্যাগ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়। এই বছর মূলমন্ত্র নির্ধারিত হয়েছিলো, "ত্যাগের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ"। অর্থাৎ ধূমপায়ীরা যেন এই অভ্যাস ত্যাগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন, কারণ ধূমপায়ীরা কেবল তাদের নিজের জীবনকেই নয়, বরং তাদের আশেপাশের সকলকে এবং প্রিয়জনদেরও পরোক্ষ ধূমপানের সম্মুখীন করছেন। ফলে সবার ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। একইসাথে শ্বাসকষ্ট এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, ধীরে ধীরে মৃত্যুর ঝুঁকি ও বেড়ে যায়। এছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের ক্যান্সার, মুখগহ্বরের ও শ্বাসনালীর ক্যান্সার, স্ট্রোক বা হার্ট এ্যাটাকের মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ধূমপায়ীদের।
"বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস" পালনের মাধ্যমে ধূমপায়ী এবং অধূমপায়ী উভয় শ্রেণীর মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হয় যেন প্রত্যেকেই এটার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবগুলো বুঝতে পারেন, ধূমপান ত্যাগের জন্য প্রাথমিক প্রচেষ্টাগুলো শিখতে পারেন এবং কিভাবে একজন ধূমপায়ীকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা যায় তা জানতে পারেন। সচেতনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, একজন ধূমপায়ী যখন ধূমপান ত্যাগ করতে মনস্থির করে, এ অভ্যাস থেকে পুরোপুরি পরিত্রাণের কঠিন সময়টায় তার আশপাশের প্রত্যেকে কিভাবে তাকে সহায়তা করতে পারে, তা সঠিকভাবে জানা এবং সেই অনুযায়ী সাহায্য করা। ধূমপায়ী ব্যক্তির মানসিক চাপ কমাতে এবং আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তামাকমুক্ত দিবসে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।