স্তনে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি থেকে টিউমার তৈরি হয় এবং এর ফলে স্তন ক্যান্সার হয়। স্তন ক্যান্সার দুধের নালী বা স্তনের দুধ উৎপাদনকারী লোবিউলের ভিতরে শুরু হয়। ৮০% স্তন ক্যান্সার আক্রমণাত্মক ধরনের হয়; এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন লিম্ফ নোড বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ। আক্রমণাত্মক ধরনের স্তন ক্যান্সার সাধারণত প্রাণঘাতী হয়।
পরিসংখ্যান
আপনি জেনে অবাক হবেন যে স্তন ক্যান্সার নারীদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বহুল সংক্রমিত ক্যান্সার। বিশ্বব্যাপী, ৫০ বা তার বেশি বয়সী নারীরা সাধারণত স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং এর হার প্রায় ৬৬%।
বাংলাদেশে ১৫-৪৪ বছর বয়সী নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, এবং এর হার প্রায় ১৯.৩%। এই হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।
ঝুঁকির কারণ ও উপসর্গ
প্রতিটি ঝুঁকির কারণ স্তন ক্যান্সারের কারণ হয় না। কিন্তু আপনার যদি কোনও ঝুঁকির কারণ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।
- বয়স
- ঋতুচক্র
- লিঙ্গ
- বর্ণ
- স্থূলতা
- জেনেটিক মিউটেশন
- মদ্যপান
- পূর্বে স্তনের অসুখ (ক্যান্সার নয়) হয়ে থাকলে
- ভারী স্তন
- পূর্বে স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকলে
- স্তনপান করানো
- দেরিতে গর্ভধারণ
- বন্ধাত্ব্য
- রেডিয়েশন থেরাপির দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করলে
- মেনোপজের পর হরমোন থেরাপি
- জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলি মহিলা থেকে মহিলা পরিবর্তিত হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, মহিলারা এই লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন নন। আপনি যদি আপনার স্তনে নীচের উল্লিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে কোনওটি লক্ষ্য করেন তবে আপনার অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে স্তনের বোঁটা উত্থিত হওয়া, চুলকানি বা ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া, স্তনের আকার, আকৃতি, তাপমাত্রা ও অবয়বে হঠাৎ পরিবর্তন,স্তন বা বগলে নতুন দলা সদৃশের উপস্থিতি যা অনেক দিন ধরে রয়েছে, স্তনের টিস্যু পুরু হয়ে যাওয়া, স্তনের উপরে ও চারপাশের ত্বকে পরিবর্তন, স্তনের বোঁটা বা স্তনের চামড়া আঁশটে মত হয়ে যাওয়া, স্তন লালাভ হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া, স্তনের বোঁটা বা স্তনে ব্যথা, মাঝে মাঝে কাঁটা বিঁধে যাওয়ার মত অনুভূতি হওয়া এবং দুধ ছাড়া স্তনের বোঁটা থেকে অন্য ধরনের পদার্থের নিঃসরণ।
প্রতিরোধ
আপনি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম নাও হতে পারেন, তবে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুশীলন করা এবং ঝুঁকির কারণগুলি হ্রাস করা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।
- কায়িক পরিশ্রম
- অপেক্ষাকৃত কম মদ্যপান
- স্তন পান করানো
- সঠিক ওজন
- ৩৫ বছরের পর জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে ‘না’ বলুন
- মেনোপজের পর হরমোন থেরাপি গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দিতে হবে
- স্বাস্থ্যসম্মত আহার
- ধূমপান ত্যাগ করা
- ঔষধ সেবন
- স্ক্রিনিং
চিকিৎসা
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন এবং এটি স্তনের ভিতরে বা বাইরে কতটা ছড়িয়ে পড়েছে তার উপর। ডাক্তাররা একক বা কম্বিনেশন থেরাপি ব্যবহার করে থাকেন। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
- অস্ত্রোপচার (স্তনের টিউমার অপসারণ)
- রেডিয়েশন থেরাপি (স্তন ক্যান্সারের পুনরায় ফিরে আসা প্রতিহত করে)
- কেমোথেরাপি (কেমো ড্রাগ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলোকে সংকুচিত বা ধ্বংস করে)
- হরমোনের চিকিৎসা (যে হরমোনগুলোর উপস্থিতিতে ক্যান্সার কোষগুলোর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় সেগুলোকে ব্লক করে)
- বায়োলজিক্যাল থেরাপি (ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে)