ভয়কে জয় করতে হবে।স্ক্রিনিং টেস্টের ফলাফলের সম্ভাব্যতা নিয়ে অনেকেই এক ধরনের দ্বিধায় ভুগতে থাকেন এবং এই টেস্ট করতে গিয়ে পিছিয়ে আসেন। আমাদের শরীরে কোনো রোগব্যাধি আছে কিনা সে বিষয়ে অবগত হওয়াটা জরুরি। রোগকে অবহেলা করলে ভবিষ্যতে তা আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
ভয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে স্বাচ্ছন্দের সাথে স্ক্রিনিং টেস্ট করানো জরুরি। টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসলে একরকম চিন্তামুক্ত হওয়া যায়, কিন্তু রেজাল্ট যদি পজিটিভ আসে তাহলে অতিস্বত্ত্বর চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা আপনাকে পুনরায় সুস্থ ও রোগ মুক্ত করে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়ের সফলতার হার বেশি হয়। আর ঠিক এই কারণেই ক্যান্সার চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্যান্সার স্ক্রিনিং টেস্ট একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এই টেস্টের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই প্রাথমিক পর্যায়ে থাকাকালীন ক্যান্সার কোষগুলো সনাক্ত করা যায়। এর ফলে চিকিৎসাও প্রাথমিক পর্যায়েই শুরু করা যায় এবং একজন রোগীর ক্যান্সার লড়াইয়ে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
স্ক্রিনিং টেস্ট ক্যান্সারকে সনাক্ত করে না, এটি মানবদেহে ক্যান্সার সদৃশ কোষগুলোকে সনাক্ত করে।
তাই, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত স্ক্রিনিং টেস্ট করাতে হবে।
স্ক্রিনিং টেস্টের সুফল:
- ক্যান্সার স্ক্রিনিং টেস্টের ফলে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার সনাক্ত করা যায় এবং চিকিৎসা সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
- প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করার ফলে সার্ভাইভাল রেটও অনেক বৃদ্ধি পায়।
- খুব স্বভাবতই ক্যান্সার দ্বিতীয়, তৃতীয় বা শেষ ধাপে যাওয়ার আগেই স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চত হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলে চিকিৎসার খরচটা যেমন একদিকে কমে যায়, অন্যদিকে আমাদের শরীরে চিকিৎসার অংশ হিসেবে বিভিন্ন কেমিক্যাল ও লাইট থেরাপির ব্যবহারটাও কম হয়।
- স্ক্রিনিং টেস্টের ফলে লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার আগেই সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
কাদের স্ক্রিনিং টেস্ট করানো উচিত?
চিকিৎসকগণ সাধারণত ৪০ বছর বয়সের আগে স্ক্রিনিং টেস্ট করানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। কিন্তু যদি আপনি সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণসমূহের সংস্পর্শে থাকেন বা পরিবারে কারো ক্যান্সার থাকলে বা প্রাক ক্যান্সারজাতীয় কোনো লক্ষণ থাকলে ২০ বছর বয়স বা এর কাছাকাছি সময়ে স্ক্রিনিং টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ঝুঁকির কারণসমূহ ক্যান্সার সংক্রমণের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বহুল ব্যবহৃত স্ক্রিনিং টেস্টগুলো কী কী?
- শারীরিক পরীক্ষা
যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিবর্তন যেমন দলা বা পিন্ডর মতো কোনো কিছু শরীরে তৈরি হয়েছে কিনা সেটা একজন স্বাস্থ্যকর্মী শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন। তারা আপনার জীবনধারণের ধারা, স্বাস্থ্য, ঝুঁকির কারণ ও পরিবারের স্বাস্থ্যগত তথ্য সম্পর্কেও জানতে চাইতে পারেন। - ল্যাবরেটরি টেস্ট
ল্যাবরেটরি টেস্ট যেমন প্যাপ স্মেয়ার টেস্ট করানো হয়। রক্তের পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে ক্যান্সারের লক্ষণ যাচাই করা হয়।
- ইমেজিং টেস্ট
ইমেজিং টেস্ট যেমন ম্যামোগ্রাম ব্যবহার করে শরীরের অভ্যন্তরের ছবি তোলা হয়।
- ক্যান্সারের জন্য জেনেটিক টেস্ট
অতীতে পরিবারে কারো যদি ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে জেনেটিক টেস্ট করানো হয়।
বর্তমানে যেসকল ক্যান্সার সনাক্তকরণের জন্য স্ক্রিনিং টেস্ট করানো হয় -
- ব্রেস্ট ক্যান্সার
প্রাথমিক পর্যায়ে যখন চিকিৎসার মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব সেই পর্যায়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ম্যামোগ্রাম কার্যকরি একটি পদ্ধতি। যেসকল জেনেটিক কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে সেগুলো সনাক্ত করার জন্য অনেকসময় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা ব্রেস্ট ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং টেস্ট করানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ৪০-৪৯ বছর বয়সীদের বছরে একবার এবং ৫০-৭৪ বছর বয়সিদের প্রতি দুই বছরে একবার করে ম্যামোগ্রাম করানোর জন্য চিকিৎসকগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- প্রোস্টেট ক্যান্সার
প্রোস্টেট ক্যান্সার চেক করার জন্য ৪৫ বছর বা তদুর্ধ্বদের রক্ত পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
- জরায়ুমুখ ক্যান্সার
চিকিৎসকগণ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের স্ক্রিনিং টেস্টের জন্য ২১ বছর বয়সে প্যাপ স্মেয়ার বা এইচপিভি টেস্ট করানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- ফুসফুসের ক্যান্সার
লো-ডোজ কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি এক ধরনের মেডিক্যাল ইমেজিং পদ্ধতি যা ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয় ও স্ক্রিনিং এর জন্য বহুল ব্যবহৃত হয়।
- কোলোরেক্টাল ক্যান্সার
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার চেক করার জন্য ৪৫ বছর বা তদুর্ধ্বদের নিয়মিত স্ক্রিনিং টেস্ট করানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
ভয়ের কারণে স্ক্রিনিং টেস্ট করানো থেকে পিছিয়ে আসবেন না। টেস্টে ক্যান্সার পজিটিভ আসলে তা হতাশাজনক বটে কিন্তু প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পুনরায় সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।
তথ্যসূত্র :
- https://www.cancer.gov/about-cancer/screening/patient-screening-overview-pdq#:~:text=Screening%20tests%20can%20help%20find,may%20have%20grown%20and%20spread.
- https://cancer.ca/en/cancer-information/find-cancer-early/screening-for-cancer/benefits-and-limitations-of-regular-cancer-screening
- https://www.cancerresearchuk.org/about-cancer/cancer-symptoms/spot-cancer-early/screening/what-is-cancer-screening
- https://www.nih.gov/about-nih/what-we-do/science-health-public-trust/perspectives/putting-cancer-screening-perspective
- https://www.cancer.gov/about-cancer/screening/screening-tests
- https://www.pfizer.com/news/articles/cancer_screenings_understanding_the_pros_and_cons
- https://my.clevelandclinic.org/health/diagnostics/24118-cancer-screening