আমাদের জীবনে ক্যান্সার কেবলমাত্র একটি প্রাণঘাতী রোগ নয় বরং এটি একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যান্সার একজন ব্যক্তিকে শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সারের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে এবং ক্যান্সার রোগীদের বাড়িতেই রাখা হয়; যখন প্রয়োজন হয় অর্থাৎ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সেই সময়গুলোতে কেবলমাত্র হাসাপাতালে নেওয়া হয় তাদেরকে।
ক্যান্সার রোগীকে সেবা প্রদানের জন্য একজনকে সর্বদা সেই রোগীর পাশে থাকতে হয়। সার্বিক দিক দিয়ে সহায়তা প্রদানের জন্য কাউকে না কাউকে থাকতেই হয়। আমরা তাদেরকে ‘সেবাপ্রদানকারী’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করতে পারি।
সাধারণত সেবাপ্রদানকারীর এই দায়িত্বটি পালন করে থাকেন স্বামী/স্ত্রী, বাবা-মা বা একজন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান। তারা বিনা পারিশ্রমিকে এই কাজটি করে থাকেন এবং সেবা প্রদানের জন্য তাদের কোন ধরনের প্রশিক্ষণও নেওয়া থাকে না। ক্যান্সার আক্রান্তের খবর একজনের পরিবার-পরিজন ও নিকটবর্তী মানুষদের তীব্র শোকের মধ্যে ফেলে দেয়, এই শোকস্তব্ধতার মধ্যে অনেকেই তাদের প্রিয় মানুষটির সেবা করার মাধ্যমে এক ধরনের মানসিক শান্তি পেয়ে থাকেন। কাছের লোকেরা এটাই মনে করে থাকে যে এই প্রাণঘাতী রোগে তাদের প্রিয় মানুষটি শারীরিক এবং মানসিক যাতনার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে, তার পাশে থেকে তাকে সেবা করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এর মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি প্রিয়জনেরা তাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে থাকে।
সেবাপ্রদানকারী হিসেবে আপনার দায়িত্ব কয়েক মাসেরও হতে পারে আবার কয়েক বছর ধরেও সেবা প্রদান করতে হতে পারে। একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর দিনের কয়েক ঘন্টা বা ২৪ ঘন্টাই সেবার প্রয়োজন হতে পারে এবং রোগীভেদে সেবা প্রদানের ধরন ভিন্ন হতে পারে। একজন সেবাপ্রদানকারীর ভূমিকা ক্যান্সার রোগীর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়ে থাকে। মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দেওয়া, কাপড় পরিয়ে দেওয়া, গোসল করিয়ে দেওয়া, সময়মত ও নিয়মমাফিক ঔষধ প্রদান করা, টাকা পয়সার লেনদেনের হিসেব রাখাসহ অন্যান্য কাজে একজন ক্যান্সার রোগীকে সাহায্য করতে হয়। একজন সেবাপ্রদানকারীকে তার প্রাত্যহিক সাংসারিক কাজ (যেমন রান্নাবান্না, ঘর ধোয়া মোছা, কাপড় ধোয়া, বাচ্চাদের পড়ালেখা করানো) এবং পরিবারের অন্যান্যদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সেবা করতে হয়।
একজন সেবাপ্রদানকারীর কাজগুলোকে আমরা এভাবে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করতে পারি যেমন-
চিকিৎসা সেবা
• ক্যান্সার রোগীর জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা
• স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী টিমের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখা
• প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ক্যান্সার রোগীকে ঔষধ প্রদান করা
• ডাক্তারের সাথে সাক্ষাতের ও টেস্ট রিপোর্টের তথ্যগুলো নিয়মিত সংরক্ষণ করা
• পূর্বের চিকিৎসার তথ্যাবলী সংরক্ষণ
• সম্ভাব্য লক্ষণ এবং চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো পর্যবেক্ষণ করা
• এরকম কিছু পরিলক্ষিত হলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের অবগত করা
প্র্যাকটিক্যাল সাপোর্ট
•প্রাত্যহিক সাংসারিক কাজের পাশাপাশি একজন ক্যান্সার রোগীর জন্য বাসার পরিবেশটিকে নিরাপদ ও আরামদায়কের ব্যবস্থা করে থাকে
• পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালন করে থাকে
• চিকিৎসা এবং নিয়মিত চেক-আপের জন্য রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়
• একান্ত ব্যক্তিগত যত্নের বিষয়গুলোতে সাহায্য করে থাকে। ক্যান্সার রোগীরা অনেকসময় তীব্র যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন যার ফলে তাদের পক্ষে ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না, এক্ষেত্রে একজন সেনাপ্রদানকারী তাকে এ বিষয়ে সহায়তা করে থাকে।
• রোগীর আহারের ব্যবস্থা করে থাকে
• ক্যান্সার রোগীর যাবতীয় কেনাকাটার দায়িত্বও তাকে নিতে হয়
• ব্যায়াম করার জন্য উৎসাহী করে থাকে
মানসিক সাপোর্ট
• একজন ক্যান্সার রোগীর পাশে থাকে
• তার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে থাকে যাতে করে একজন ক্যান্সার রোগীর কখনোই মনে না হয় যে তার কথাগুলোকে বা তাকে অবহেলা করা হচ্ছে
• তার সুস্থতার জন্য মনে সাহস জুগিয়ে থাকে
• পরিবারের বাকি সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব্দের রোগীর স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত করে থাকে যাতে করে সবাই রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে।
• ক্যান্সারের বিষয়টাকে আলোচনার বাইরে রেখে বাকি সব বিষয় নিয়েই কথপোকথন হয়ে থাকে
• ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিরা যে কাজ বা বিষয়গুলো পছন্দ করে সেগুলো করে থাকে
• তাকে কখনোই একলা বা উপেক্ষিত বোধ হতে দেয় না
আর্থিক ব্যাপার দেখাশোনা
• ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার যাবতীয় খরচপত্রের হিসেব রাখা ও তদারকি করে থাকে
• প্রয়োজনবোধে আর্থিক সহায়তার জন্য চেষ্টা করে থাকে
• ক্যান্সার রোগীর ইচ্ছে অনুযায়ী উইলের ব্যাপারে কথা বলার জন্য প্রয়োজনে আইনজীবীর সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে থাকে