প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৫ :০১

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়সমুহ ​

জরায়ু ক্যান্সার বা সার্ভিকাল ক্যান্সার হল এক ধরনের ক্যান্সার যা জরায়ুর কোষে ঘটে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, জরায়ু মুখের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মহিলাদের মধ্যে চতুর্থ সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সার, ২০২০ সালে আনুমানিক ৬,০৪,০০০ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং ৩,৪২,০০০ জন মারা গেছে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০% নতুন রোগী শনাক্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে  মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

জরায়ুর ক্যান্সার শুরু হয় যখন জরায়ুমুখ এবং যোনির সংযোগস্থলে সুস্থ কোষ, যা রূপান্তর অঞ্চল নামে পরিচিত, মিউটেশন তৈরি করে। মিউটেশনগুলি কোষের স্বাভাবিক কোষ চক্রকে পরিবর্তন করে এবং তাদের বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে বৃদ্ধি হতে শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে, একটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে মিউটেটেড কোষ নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে এবং তাই এই পরিবর্তিত কোষগুলির একটি ক্লাস্টার তৈরি হয়। অস্বাভাবিক কোষের এই গুচ্ছ টিউমার নামে একটি ভর গঠন করে। ক্যান্সার কোষগুলি আশেপাশের টিস্যুকে আক্রমণ করতে পারে এবং টিউমার থেকে ভেঙে শরীরের যেকোনো জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে জরায়ুর ক্যান্সারের মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়।

কারণ:

প্রায় ৯৫% ক্ষেত্রেই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) এর কারণে জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকে। HPV এর ২টি প্রকার (১৬ এবং ১৮) প্রায় ৫০% উচ্চ গ্রেডের জরায়ু প্রাক-ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

জরায়ুর মুখের ক্যান্সার প্রায়শই তার প্রাথমিক পর্যায়ে কোন উপসর্গ উপস্থাপন করে না, তাই এটিকে "নীরব ঘাতক" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু রোগের বিকাশের সাথে সাথে লক্ষণগুলি আস্তে আস্তে প্রকাশিত হতে পারে।

জরায়ু ক্যান্সারের পূর্ববর্তী কিছু লক্ষণ :

  •  নিম্নাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা কিংবা ঘনঘন মূত্রত্যাগ করা
  • গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য। হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা, পেটে অস্বস্তি লাগা, ইত্যাদি। পেটের কোনো সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
  •  অন্য সময়ের থেকে পেটে অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়া।
  •  পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা।
  •  বমি বমি ভাব কিংবা বারবার বমি হওয়া।
  •  ক্ষুধা কমে যাওয়া।
  •  অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা ওজন অনেক বেশি কমে যাওয়া।
  •  যৌনমিলনের সময় ব্যথা পাওয়া।
  •  অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা।
  •  নারীদের মেনোপজ হওয়ার পরও ব্লিডিং হওয়া।

এ ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীরা অসুখ হওয়ার প্রথম অবস্থায় চিকিৎসা না করানোর ফলে তাদের বেঁচে থাকার হার ৫০ শতাংশ কমে যায়। যারা প্রথম থেকেই চিকিৎসা করান তাদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা থাকে ৯৫ শতাংশ।

নিচে সার্ভিকাল ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণগুলি দেয়া হল:

একাধিক যৌন সঙ্গী থাকা : একজন ব্যক্তির অনেক যৌন সঙ্গী থাকলে সে ব্যক্তির এইচপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। 

অল্প বয়সে যৌন ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকা: অল্প বয়সে সহবাস করা এইচপিভির ঝুঁকি বাড়ায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে : যদি কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য রোগের  কারণে দুর্বল হয়ে যায় এবং সে ব্যক্তির  এইচপিভি থাকে, তাহলে তার সার্ভিকাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। 

ধূমপান: তামাক ব্যবহার সার্ভিকাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

প্রতিরোধ :

হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন :

হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) এর কারনে প্রায়শই সার্ভিকাল, যোনি এবং ভালভার ক্যান্সারের হয়। হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন এইচপিভির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। ১১ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের HPV টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কিন্তু ৯ বছর বয়স থেকে শুরু করে দেওয়া যেতে পারে৷ যারা ৯-১২ বছরের মধ্যে HPV টিকা গ্রহণ করেনি তারা ২৬ বছর বয়সের মধ্যেও এ টিকা গ্রহণ করতে পারে।

দুটি স্ক্রীনিং পরীক্ষা দেহের এমন পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে যা পরবর্তীতে জরায়ু বা সার্ভিকাল ক্যান্সারে পরিনত হতে পারে, সেগুলো হলো- 

১. প্যাপ টেস্ট (বা প্যাপ স্মিয়ার): এ পরীক্ষা সার্ভিক্সের কোষের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে, এই পরিবর্তনের সঠিক চিকিৎসা না করলে তা সার্ভিকাল বা জরায়ু ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।

২. এইচপিভি পরীক্ষা : এ পরীক্ষা মানবদেহে হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের সন্ধান করে যা কোষের পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

সার্ভিকাল ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলিও গ্রহণ করা উচিত :

  •  বয়ঃসন্ধিকাল বা তার বেশি বয়সের আগে কারো সাথে শারীরিক সম্পর্কে না জড়ানো। 
  •  একাধিক ব্যাক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন  করা থেকে বিরত থাকা।
  •  নিরাপদ যৌন অভ্যাস গড়ে তুলতে কনডম ব্যবহার করা।
  •  যারা একাধিক সঙ্গীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে তাদের সাথে যৌন সম্পর্কে না জড়ানো ।
  •  যাদের বিভিন্ন যৌন রোগের উপসর্গ রয়েছে তাদের সাথে যৌন যোগাযোগ এড়িয়ে চলা।

ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অনেকেই থাকেন, যাঁরা চিকিৎসার ব্যাপারে উদাসীন। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায়, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘ সময় ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত কিংবা অ্যাডভান্সড স্টেজে বিভিন্ন জটিল উপসর্গ নিয়ে আসে। বর্তমানে আমাদের দেশেও ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। তাই উপসর্গ দেখামাত্রই দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।


Awsaf Sadique
আওসাফ সাদিক