টেস্টিকুলার ক্যান্সার হল অণ্ডকোষের (টেস্টেস) ক্যান্সার যা স্ক্রোটামের ভিতরে অবস্থিত। অণ্ডকোষের প্রধান কাজটি হল পুরুষ সেক্স হরমোন (টেস্টোস্টেরন) এবং শুক্রাণু উৎপাদন। টেস্টিকুলার ক্যান্সার এক বা উভয় অণ্ডকোষকে আক্রমণ করতে পারে।
২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী অণ্ডকোষের ক্যান্সারে প্রায় ৬৮৬,০০০ লোক আক্রান্ত হয়েছিল। সেই বছর এর ফলে ৯৪০০ জনের মৃত্যু হয়,যা ১৯৯০ সালের মৃত্যু সংখ্যার (৭০০০ জন) চেয়ে বেশি। উল্লেখ্য যে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশে মৃত্যু হার কম।
টেস্টিকুলার ক্যান্সার একটি সাধারণ ধরনের ক্যান্সার নয়। এটি যে কোনও বয়সে ঘটতে পারে, তবে এটি প্রায়শই ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে।
টেস্টিকুলার ক্যান্সারের প্রথম সাধারণ লক্ষণ একটি অণ্ডকোষের উপর পিণ্ড অনুভুত হওয়া। ক্যান্সার কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এগুলি প্রায়শই অণ্ডকোষের বাইরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
টেস্টিকুলার ক্যান্সার অত্যন্ত চিকিৎসাযোগ্য , এমনকি যখন এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তখনও । টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ধরন এবং এটি কতদূর ছড়িয়েছে তার উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সার্জারি এবং কেমোথেরাপি।
সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, এবং ইমেজিং পরীক্ষা যেমন আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই টেস্টিকুলার ক্যান্সার নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য একটি বায়োপসি করা যেতে পারে। রোগ নির্ণয় নিশ্চিত হওয়ার পর ক্যান্সারের স্টেজ বা পর্যায় নির্ণয় করা হয়,এটি গুরুত্বপূর্ণ কারন ক্যান্সারের পর্যায়ের উপর নির্ভর করে ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়।
টেস্টিকুলার ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হবার পরও রোগীর সুস্থ হবার উচ্চ সম্ভাবনা থাকে । টেস্টিকুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষদের ক্যান্সার শনাক্ত হবার পর পাঁচ বছরের বেঁচে থাকার হার ৯৯% এর বেশি। এমনকি যদি ক্যান্সার পার্শ্ববর্তী লিম্ফ নোডগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে, তবুও নুন্যতম পাঁচ বছরের বেঁচে থাকার শতাংশ বেশি থাকে। এটি এই কারণে যে টেস্টিকুলার ক্যান্সার অত্যন্ত চিকিৎসাযোগ্য এবং প্রায়শই সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপির সংমিশ্রণে চিকিৎসার মাধ্যমে সহজেই নিরাময় করা যেতে পারে।
আক্রান্ত অণ্ডকোষ অপসারণের সার্জারি হল টেস্টিকুলার ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা।এই অপারেশনে কুঁচকি কাটার মাধ্যমে আক্রান্ত অণ্ডকোষটি অপসারণ করা হয়। নিরাপদ থাকা অপর অণ্ডকোষটি তখনও পুরুষদের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট টেস্টোস্টেরন এবং শুক্রাণু উৎপাদন করতে সক্ষম। অস্ত্রোপচারের পরে অণ্ডকোষের আকার ধরে রাখতে, রোগীর একটি কৃত্রিম অণ্ডকোষ বসানো হতে পারে। যদি ক্ষতিকারকতা পার্শ্ববর্তী লিম্ফ নোডগুলিতে অগ্রসর হয় তবে সেই নোডগুলি অপসারণেরও প্রয়োজন হতে পারে।
কেমোথেরাপি প্রায়শই অস্ত্রোপচারের পরে অবশিষ্ট ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। কেমোথেরাপিতে এমন ওষুধের ব্যবহার হয় যা দ্রুত ক্যান্সার কোষকে শনাক্ত করে। ওষুধগুলি সাধারণত চক্রে দেওয়া হয় যাতে চিকিৎসার পর রোগীর দেহ বিশ্রাম নেবার সময় পায় এবং দেহ পরবর্তী ধাপের তৈরি হতে পারে। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং চুল পড়া ইত্যাদি রয়েছে।
৫ বছরের বেঁচে থাকার হার থেকে জানা যায় যে, কত শতাংশ মানুষ ক্যান্সার ধরা পড়ার পরে কমপক্ষে ৫ বছর বেঁচে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেস্টিকুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সাধারণ ৫ বছরের বেঁচে থাকার হার ৯৫%। এর মানে হল যে টেস্টিকুলার ক্যান্সার নির্ণয় করা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৫ জন নির্ণয়ের পরে কমপক্ষে ৫ বছর বেঁচে থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেঁচে থাকার হার বেশি এবং পরবর্তী পর্যায়ের ক্যান্সারে আক্রান্তদের জন্য কম। টেস্টিকুলার ক্যান্সারের বেলায়, অণ্ডকোষের বাইরে ছড়িয়ে পড়েনি এমন রোগীদের বেঁচে থাকার হার ৯৯%।
তাই বলা যায় টেস্টিকুলার ক্যান্সারের প্রাথমিক নির্ণয় এবং চিকিৎসা উল্লেখযোগ্যভাবে ফলাফলের উন্নতি করে এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলে।