প্রকাশ : ০৩ অগাস্ট ২০২৩, ১১ :১৭

সারকোমা নিয়ে কিছু ভুল ধারনা : ভ্রান্ত ধারনা এবং বাস্তবতা

সারকোমা একটি বিরল ধরণের ক্যান্সার যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘটতে পারে।

এখানে সারকোমা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভুল ধারণা এবং বাস্তবতা সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে যা সারকোমাকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা  সহায়তা নিতে সহায়তা করবে -

১. ভুল ধারণা :
সুপার ফুড গ্রহনের মাধ্যমে সারকোমা প্রতিরোধ করা যাবে।

বাস্তবতা :
কোনো নির্দিষ্ট খাবার কার্যকরভাবে সারকোমা প্রতিরোধ করতে পারে না, যদিও বেশ কিছু পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যার ফলে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হলো নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া। যেহেতু প্রতিটি খাবারের আলাদা আলাদা পুষ্টি রয়েছে, তাই সবকিছুর সামান্য কিছু খাওয়া শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। মাংস, চিনি, লবণ এবং চর্বিজাতীয় খাবার কম গ্রহণ করা উচিত। বেশি গ্রহণ করা উচিত ফল এবং সবজি। বিভিন্ন রঙের ফল এবং সবজি খাওয়ার মাধ্যমও প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়।

২. ভুল ধারনা :
যেহেতু  হাড়ের ফোলা অংশে ব্যথা নেই, তার অর্থ ক্যান্সার হয়নি

বাস্তবতা :
সাধারণত ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলির বেশিরভাগই বেদনাদায়ক নয়। তবে ক্যান্সার অনেকাংশে ছড়িয়ে পড়লে ব্যথা অনুভূত  হতে পারে । হাড়ের সারকোমাসের ক্ষেত্রে, যথেষ্ট ব্যথা অনুভব করার আগেই সারকোমা আক্রান্ত হাড়ের এক তৃতীয়াংশ অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে। নরম টিস্যু সারকোমায় সাধারণত সামান্য ব্যথা হয়না, কিন্তু টিউমার স্নায়ুতে চাপ চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয়।

৩. ভুল ধারনা :
আমার সারকোমা হতে পারে না কারণ আমার টিউমার শনাক্তকরার জন্য রক্ত ​​পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক।

বাস্তবতা :
বর্তমানে টিউমার শনাক্ত করতে পারে এমন কোন রক্ত ​​পরীক্ষা আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে রক্ত পরীক্ষা দ্বারা সারকোমা নির্ণয় করা যায় না । পৃথিবীজুড়ে ক্যান্সার স্ক্রীনিং পরীক্ষার সুযোগ সীমিত, শুধুমাত্র লিভার ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের মতো কয়েকটি ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব । সারকোমাসের জন্য এরুপ কোনো ব্যবস্থা নেই।

৪. ভুল ধারনা :
সব ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি একই

বাস্তবতা :
অন্যান্য সকল ক্যান্সারের মতো   হাড়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা  ক্যান্সারের ধরন এবং স্টেজের উপর নির্ভর করে। যেমন  মায়লোমা/লিম্ফোমার ক্ষেত্রে কোনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নাও হতে পারে, তেমনি অস্টিওসারকোমার ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি এবং সার্জারি উভয়ই প্রয়োজন হতে পারে। আবার কনড্রোসারকোমা বেশিরভাগক্ষেত্রেই শুধুমাত্র অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই চিকিৎসা করা হয়।

৫. ভুল ধারনা :
ক্যান্সার চিকিৎসায় অঙ্গচ্ছেদ প্রয়োজনীয় 

বাস্তবতা :
যদিও অতীতে সারকোমার চিকিৎসার জন্য বাহু বা পা কেটে ফেলা সাধারণ বিষয় ছিল ছিল , তবে এটি আজ বিরল। আজকাল বেশিরভাগ সময়, আক্রান্ত অঙ্গ না কেটেই ক্যান্সার চিকিৎসা সম্ভব।

বর্তমানে, অঙ্গচ্ছেদ শুধুমাত্র সেইসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যেসব ক্ষেত্রে অঙ্গচ্ছেদই হচ্ছে ক্যান্সার অপসারণের একমাত্র উপায়। আবার টিস্যু অপসারণের ফলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা একটি অঙ্গ ভালভাবে কাজ না করার সম্ভাবনা থাকলে ডাক্তাররা ক্যান্সার আক্রান্ত অঙ্গ অপসারণকে বেছে নেন।

হাড়ের সারকোমার বেলায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অঙ্গচ্ছেদ ছাড়াই চিকিৎসা সম্ভব।

৬. ভুল ধারনা :
শিশুদের ক্যান্সার হতে পারে নাব,এটা প্রাপ্ত বয়স্কদের রোগ

বাস্তবতা :
দুর্ভাগ্যবশত, শিশুরাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। হাড়ের ক্যান্সার শিশুদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়।

৭. ভুল ধারনা :
স্টেজ ৪ এর ক্যান্সার রোগীদের বেচে থাকার সম্ভাবনা নেই

বাস্তবতা :
অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, নতুন ওষুধে ক্লিনিকাল ট্রায়াল, জিন এবং স্টেম সেল থেরাপিসহ চিকিৎসাক্ষেত্রে অগ্রগতি এডভান্সড স্টেজে থাকা সারকোমা রোগীদেরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

৮. ভুল ধারনা :
ক্যান্সার এর চিকিৎসা ক্ষতি বাড়িয়ে দেয়।

বাস্তবতা :
বমি বমি ভাব এবং চুল পড়া সহ কেমোথেরাপির সম্ভাব্য বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে রোগীদের মধ্যে এমন ধারনা রয়েছে। যদিও এটি সম্পূর্ণরূপে সঠিক নয়। উদাহরণস্বরূপ, সমস্ত রোগীর চুল পড়ে না এবং যাদের চুল পড়ে তাদের চুল পুনরায় গজায়।


Awsaf Sadique
আওসাফ সাদিক