প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯ :৫৪

স্বাধীনতা দিবসে আসুন ক্যান্সার মুক্ত সমাজ গড়ার প্রতিজ্ঞা করি

আজ ২৬ মার্চ। সারা দেশজুড়ে এই দিনটিকে মহান স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যাদের জীবনের আত্মত্যাগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার জন্য ২৬ মার্চ একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে পালিত হয়। বীর শহীদদের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই।

যদিও এটা সহজ ছিল না কিন্তু আমরা পাকিস্তানের শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করেছিলাম। বর্তমানে শুধু আমরা নই বরং পুরো বিশ্ব এক মরণঘাতি রোগের হাত থেকে মুক্তির জন্য লড়াই করে চলেছে। ক্যান্সার আমাদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে।

সকল ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় কিন্তু কিছু কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য আমরা চেষ্টা করতে পারি। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই কী শ্রেয় নয়?

একবার ভেবে দেখুন তো, ১৯৭১ সালে সাহসী যোদ্ধারা এগিয়ে এসে যদি প্রতিরোধ গড়ে না তুলত তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা কী কখনো অর্জিত হতো? ছোট ছোট প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো হয়তো একদিন ক্যান্সার থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, ৩০-৫০% ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এটা খুবই উদ্বেগজনক যে, বিশ্বে মানব মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ক্যান্সার। কিছু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো হচ্ছে -

ধূমপানকে ‘না’ বলুন
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের ফলে নানা ধরনের ক্যান্সার যেমন-ফুসফুসের ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, গলার ক্যান্সার, স্বরযন্ত্রের ক্যান্সার, মূত্রাশয়ের ক্যান্সার, সার্ভিক্যাল ক্যান্সার ও কিডনির ক্যন্সার হতে পারে।

নিয়মিত শরীরচর্চা
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করার অভ্যাস করতে হবে। এর ফলে আমাদের শরীর ভালো থাকে এবং নানা রকম রোগ যেমন-ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জটিলতার ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস পায়। নিয়মিত শরীরচর্চা হতে পারে যেমন-হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম, বাগানে কাজ করা, নৃত্য, জিমে যাওয়া বা শারীরিক কসরত হয় এমন যেকোনো ধরনের খেলাধূলা।

অ্যালকোহলের ব্যবহার সীমিত করা
অ্যালকোহল গ্রহণ না করাই উত্তম। অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে নানা রকম ক্যান্সার যেমন-মুখের ক্যান্সার, ফ্যারিংক্সের ক্যান্সার, ল্যারিংক্সের ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার, লিভারের ক্যান্সার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে।

সঠিক ওজন বজায় রাখা
প্রায় ১৩ টি ক্যান্সারের প্রধাণ কারণ হচ্ছে স্থূলতা। সঠিক ওজন বজায় রাখার অনেকগুলো স্বাস্থ্যসুবিধা রয়েছে তার মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসও রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিমিত আহার ও নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে সঠিক ওজন বজায় রাখা সম্ভব।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের বিষয়টি খুবই সহজ। ফলমূল, শাকসবজি ও শস্যদানা জাতীয় খাবারগুলোকে খাবারের তালিকায় একদম শীর্ষে রাখতে হবে এবং লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার ও চর্বি জাতীয় খাবারগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে।

সূর্যালোক থেকে সাবধানে থাকতে হবে
দীর্ঘসময় ধরে রোদে থাকা যাবে না কারণ এর ফলে ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে। বাচ্চারা খুবই সংবেদনশীল হয়, তাই তাদেরকে খুব সাবধানে রাখতে হবে। সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত সূর্যের প্রখরতা খুব বেশি থাকে তাই এই সময় বাইরে বের না হওয়াই ভালো।

ইনফেকশন
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি), হেপাটাইটিস বি ও সি, এপস্টেইন-বার ভাইরাস ও এইচআইভির সংক্রমণের ফলে ক্যান্সার হতে পারে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, ইনফেকশনের কারণে প্রায় ১৫% ক্যান্সার হয়। টিকা গ্রহণের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে।

রেডিয়েশন, পরিবেশগত ও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ
রেডিয়েশন, পরিবেশগত ও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থের কারণে নানা ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। এগুলো থেকে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে।

স্ক্রিনিং টেস্ট করাতে হবে
আমরা যদি একটু সচেতন হই এবং আগে থেকেই স্ক্রিনিং টেস্ট করাই তাহলে অনেক ধরনের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।

ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এড়িয়ে চলা
অনিরাপদ যৌন আচরণের ফলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার, পায়ুপথের ক্যান্সার, পুংলিঙ্গের ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার ও যোনিপথের ক্যান্সার হতে পারে।

ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে অন্যের ব্যবহারকৃত ইনজেকশন ব্যবহার করা যাবে না, এর ফলে যকৃতের ক্যান্সার হতে পারে।

ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ততা
এটা পরীক্ষিত যে অন্ত্র ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ডি সাহায্য করে।

“ক্যান্সার আপনার জীবনের পুরো একটি গল্প হতে পারে না, এটি কেবল একটি অধ্যায় মাত্র”


Fighting Cancer Desk
ফাইটিং ক্যান্সার ডেস্ক