বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার আক্রান্তের হিসেব অনুযায়ী যকৃত ক্যান্সার ষষ্ঠ সর্বাধিক সংক্রমিত ক্যান্সার। এটি পুরুষদের মধ্যে পঞ্চম এবং নারীদের মধ্যে নবম সর্বাধিক সংক্রমিত ক্যান্সার, আক্রান্ত রোগীদের গড় বয়স প্রায় ৬৩ বছর।
বেশকিছু কারণ রয়েছে যেগুলোকে যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে –
- অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন
- লিঙ্গ (পুরুষ)
- স্থূলতা
- বর্ণ (এশীয় আমেরিকান, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী অধিবাসিরা)
- যকৃতে অত্যধিক চর্বি জমে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট অসুখ
- পূর্বপুরুষগতভাবে চলে আসা সৃষ্ট যকৃতের অসুখ
- সিরোসিস
- দীর্ঘদিনযাবত সংক্রমণ যেমন HBV বা HCV এর সংক্রমণ
- ডায়াবেটিস
- আফ্লাটক্সিনের (এক ধরনের বিষ) সংস্পর্শে আসলে
যকৃত ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসা করানো না হয় তাহলে এর পরিনতি মারাত্মক হতে পারে । কিছু সতর্কতামূলক পন্থা মেনে চললে অধিকাংশ যকৃত ক্যান্সারই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অ্যালকোহল এবং তামাক এড়িয়ে চলুন
অ্যালকোহল সেবনের ফলে সিরোসিস হতে পারে এবং এর ফলশ্রুতিতে যকৃত ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সম্পূর্ণরূপে অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চললে তা যকৃত ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ধূমপানকে না বলুন কারণ এটি যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপান বন্ধ করলে এই ক্যান্সারের পাশাপাশি অন্যান্য অসংখ্য ক্যান্সার এবং গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কমে যাবে।
টিকা গ্রহণ
হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস দুইটি যকৃত সংক্রমণের কারণ হতে পারে এবং যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। যকৃত ক্যান্সার প্রতিরোধের একটি প্রধাণ উপায় হচ্ছে এই ভাইরাসগুলির বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণ করা। আপনার ক্যান্সার ঝুঁকি এবং আপনার জন্য টিকা নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে, আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস মেনে চলুন
যকৃত ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভাস মেনে চলা জরুরি। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফল, শাকসবজি, শস্যদানা এবং চর্বিহীন মাংস রাখতে হবে।
একই সাথে প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি পানীয় এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম শুধুমাত্র যকৃতকেই সুস্থ রাখে না বরং এর পাশাপশি স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করে। ব্যায়াম, যেমন- সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা হাঁটাহাটি যকৃতের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে, যা যকৃতের সুস্থতা বজায় রাখতে অপরিহার্য।
স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখুন
যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখা জরুরি। স্থূলতার কারনে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা যকৃত ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। স্থূলতা যকৃতের রোগের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির কারণ। আপনি একটি সুষম খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে পারেন।
যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন রোগের চিকিৎসা করুন
জেনেটিক ডিসঅর্ডারের ফলে লিভারে সিরোসিস হয় যা যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। শৈশবের শুরুতে এই ধরনের রোগ চিহ্নিত করে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পরিবারে কারো হেমোক্রোমাটোসিস থাকলে সেই পরিবারের প্রত্যেকটি শিশুর ছোটবেলাতেই মেডিকেল চেকআপ এবং কোনো ধরনের জটিলতা থাকলে সাথে সাথেই চিকিৎসা করানো উচিত। এই রোগের চিকিৎসায় শরীরের উচ্চ আয়রনের মাত্রা কমানোর জন্য অল্প অল্প করে রক্ত নিয়মিতভাবে শরীর থেকে অপসারণ করা হয়।
ক্ষতিকারক রাসায়নিক থেকে দূরে থাকুন
বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসলে যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা যকৃত ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। কর্মক্ষেত্রে এবং আপনার বাড়িতে বিপজ্জনক রাসায়নিকের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন।