খাদ্যনালীর ক্যান্সার খাদ্যনালীতে (খাদ্যনালীর ফাঁপা অংশ, পেশীবহুল নালী যার মধ্য দিয়ে খাবার ও পানীয় পাকস্থলীতে পৌঁছায়) হয়ে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার খাদ্যনালীর ভেতরের আবরণীতে বিস্তার লাভ শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তা লিম্ফনোড এবং অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পরিসংখ্যান
খাদ্যনালীর ক্যান্সার নারীদের তুলনায় পুরুষদের অধিক হয়ে থাকে। বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তের দিক থেকে বিচার করলে এটি ৮ম দায়ী ক্যান্সার। ৫৫ বছরের অধিক বয়সীদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই ক্যান্সারের প্রকোপ দেখা যায়।
লক্ষণসমূহ
- ঠোঁটে বা মুখে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষত বা গোটার মত মাড়ি
- জিহ্বা বা চিবুকে সাদা বা লাল দগদগে চিহ্ন
- অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
- ব্যথা বা মুখে অসাড় অনুভব করা
- ফুলে যাওয়ার কারণে দাঁতে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া
- ঠোঁট, মুখ বা গলায় গোটার মতো বা মোটা আস্তর পড়ে যাওয়া
- চিবাতে সমস্যা হওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
কারণসমূহ
- ধূমপান দীর্ঘদিন ধরে বুকে জ্বালাপোড়া করা
- অত্যধিক মদ্যপান
- স্থূলতা
- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস
- ব্যারেট’স এসোফেগাস
- পূর্বে ক্যান্সার হয়ে থাকলে
- এসিড রিফ্লাক্স
ঝুঁকির কারণসমূহ
- লিঙ্গ (পুরুষ)
- বয়স (৫৫ বছরের অধিক)
- দীর্ঘসময় সূর্যালোকে থাকা
- দাঁতের সমস্যার কারণে দীর্ঘসময় ধরে মুখে জ্বালাপোড়া
- ফলমূল ও শাকসবজি কম খাওয়া
- ইমিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধ সেবন করা
- পূর্বে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার হয়ে থাকলে
- কোনো ধরনের রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসা
- লিচেন প্ল্যানাস
- তামাক বা পান সেবন করা
- ফ্যানকোনি’স এনিমিয়া থাকলে
- ডিসকেরাটোসিস কনজেনিটা
জটিলতা
প্রাথমিক পর্যায়ে যদি খাদ্যনালীর ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব না হয় বা সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হয় তাহলে রোগীর বমি, হেমাটেমেসিস, অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া, মেলেনা এবং প্রচন্ড বুকে ব্যথা হতে পারে।
প্রতিকার
- সম্পূর্ণরূপে তামাক সেবন এড়িয়ে চলা
- নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা করানো
- পরিমিত অ্যালকোহল সেবন
- প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করা
- রোদে কম ঘোরাফেরা করা
- সানস্ক্রিণ রয়েছে এমন লিপ বাম এবং চারিদিকে কিনারাযুক্ত টুপি ব্যবহার করা
- প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন রকম ফলমূল ও শাকসবজি রাখা
চিকিৎসা
এই ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং ক্যান্সারের বর্তমান পরিস্থিতি, যেমন এটি কী অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে নাকি যেখানে ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়েছিল সেখানেই শুধু সীমাবদ্ধ রয়েছে এই বিষয়গুলোর উপর। চিকিৎসা চলাকালীন বা পরবর্তী সময়ে, রোগীর বেশকিছু চেক-আপ, পরীক্ষা-নিরিক্ষা এবং স্ক্যান করাতে হতে পারে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-
- সার্জারি
খাদ্যনালীর ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা যায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে না পড়ে তাহলে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা সার্জারির জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- কেমোথেরাপি
ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে কেমোথেরাপি দিয়ে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়। সার্জারির আগে বা পরে ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়া হতে পারে।
- রেডিওথেরাপি
উচ্চমাত্রার রশ্মি ব্যবহার করে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সার চিকিৎসা এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
- টার্গেটেড মেডিসিন ও ইমিউনোথেরাপি
কিছু কিছু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ টার্গেটেড মেডিসিন ও ইমিউনোথেরাপির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ক্যান্সারের বৃদ্ধি রোধ করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।