"ক্যান্সার" দূরারোগ্য ব্যাধি। কথাটির সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে তা আর দুরারোগ্য বা মরণব্যাধি নয়, তাই আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান "ক্যান্সার দুরারোগ্য" কথাটি মানতে নারাজ।
বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে বেশ কিছু ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। নিয়মিত গবেষণালব্ধ ফলাফলের কারণে ক্যান্সার রোগীরা নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠতে পারেন,তারা সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবেন।
বাংলাদেশ বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসায় অনেক দূর এগিয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন আমাদের দেশের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানি গুলো ও স্বল্প মূল্যে অনেক কার্যকরী ওষুধ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমানে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি হাসপাতালও গড়ে উঠেছে। তবে আমাদের দেশে অল্প বয়সী রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এবং তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি রোগীর বয়স ৫০ বছরের নিচে, যা আমাদের জন্য একটি বড় হুমকি। ক্যান্সার সনাক্তকরণ এর ক্ষেত্রে আমাদের দেশে আরও উন্নত ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশে আরও বেশি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। বাংলাদেশ ক্যান্সার রোগীদের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দের অপ্রতুলতা লক্ষনীয়। পাশাপাশি অ্যান্টিক্যান্সার ড্রাগসের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে হবে। ক্যান্সার চিকিৎসা যেহেতু খুব ব্যয়বহুল, তাই এ বিষয়ে কিছুটা গুরুত্ব দিতে হবে। আশার কথা এই যে বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ধরন আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং এখানে বিশ্বমানের ক্যান্সার চিকিৎসার সুব্যবস্থাও রয়েছে।
ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ের পর তিন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়৷ সার্জারি, কোমোথেরাপি এবং রেডিওথেপারি বা বিকিরণ চিকিৎসা৷ আরো কিছু আধুনিক চিকিৎসা আছে এবং বাংলাদেশে বেশ কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাও রয়েছে।
ডা.অরুনাংশু দাস বলেন, "বর্তমানে আমরা আর কেমোথেরাপিউটিক ড্রাগ এর জন্য আমদানি নির্ভর নই, বরং দেশেই এখন এগুলো উৎপাদিত হচ্ছে এবং রপ্তানি ও হচ্ছে"। বিগত ১২ বছরের তুলনায় বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসায় বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো।
বর্তমান সময়ে ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়া হয় এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পুরো শরীরেই কমবেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাছাড়া কিছু নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োগ হচ্ছে বর্তমানে।
এছাড়াও আমেরিকায় গবেষণারত বাংলাদেশের প্রকৌশলী সৌগত সরকার হিল্লোল ক্যান্সার চিকিৎসার এমন একটি পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন, যা দিয়ে দেহের সুস্থ কোষগুলোর কোনো ধরনের ক্ষতি না করে পুরো ক্যান্সারে আক্রান্ত অংশটি স্থায়ীভাবে ধ্বংস করা যায়। ক্যান্সার থেরাপিতে কার্বন ন্যানোটিউব ব্যবহারের এ পদ্ধতি ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে চিকিৎসকরা মনে করেন। উন্নত গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির প্রভাবে অদূর ভবিষ্যতেই ঝুঁকি কমিয়ে ক্যান্সার এর চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।