খাদ্যনালীর ক্যান্সারের উৎপত্তি হয় এক ধরনের প্রাণঘাতী টিউমারের উপস্থিতিতে যা খাদ্যনালীর যে কোন অংশে অথবা পরিপাকতন্ত্রে থাকতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। গলা থেকে পেট ও পাকস্থলী পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করে খাদ্যনালী বা অন্ননালী। পাকস্থলীর ক্যান্সারের পর খাদ্যনালীর ক্যান্সার সর্বাধিক পরিচিত, এবং ৫০ বছরের পর থেকে এর ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত ও অনিয়মিত খাদ্যাভাস সহ আরো কিছু কারণে কম বয়স্কদের মধ্যেও এ ক্যান্সারের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর এপ্রিল মাসকে খাদ্যনালীর ক্যান্সারের জন্য সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হয়।
খাদ্যনালী ক্যান্সারকে চার ভাগে ভাগ করা হলেও প্রধান দুটি উপপ্রকার বেশি দেখা যায়। একটি হলো স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা যা খাদ্যনালীর উপরের অংশের রেখার কোষ থেকে উৎপন্ন হয়। অপরটি হলো খাদ্যনালীর অ্যাডেনোকারসিনোমা, যা খাদ্যনালী এবং পাকস্থলীর সংযোগস্থলে উপস্থিত গ্রন্থি কোষের অনিয়ন্ত্রিত পরিবর্তনের কারণে দেখা যায়।
খাদ্যনালী ক্যান্সারের কারণ এখনো স্পষ্ট না হলেও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, পারিবারিক ইতিহাস, ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন রোগে আক্রান্ত হবার পূর্ব অভিজ্ঞতা, ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ইত্যাদি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিকভাবে লক্ষণ হিসেবে খাবার খেতে ও গিলতে অস্বস্তি বোধ হয়, বুক জ্বালাপোড়া করা ও সূঁচের মতো কোনো কিছু অনুভূত হতে পারে। ৯০-৯৫% রোগীর ক্ষেত্রে ক্যান্সার অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ার পর পরিণত পর্যায়ে লক্ষণ প্রকাশিত হতে দেখা যায়। এসময় খাবার খেতে প্রচন্ড অসুবিধা থেকে বমি হতে শুরু করে। রক্তশূন্যতা, পানিশূন্যতা, প্রচন্ড দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। মারাত্মক অবস্থায় খাদ্যনালী থেকে খাবার মুখে চলে আসতে পারে, বিশেষ করে শোয়া অবস্হায়।
এপ্রিল মাস জুড়ে এ ক্যান্সার প্রতিরোধে সকল স্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো তথ্যকেন্দ্র তৈরি করে থাকে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের খাদ্যনালীর ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও তথ্যকেন্দ্র তৈরির পাশাপাশি আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের দল পাঠিয়ে ক্যান্সারের বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত (লক্ষণ, কারণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, সাবধানতা) লিফলেট ও পুস্তিকা বিতরণের ব্যবস্থা গ্ৰহণ করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরির জন্য চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবক দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করার চেষ্টা করে। প্রচলিত গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে খাদ্যনালীর ক্যান্সার সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে সচেতনতার হার কিছুটা হলেও বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়।
ক্যান্সারের উৎপত্তি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকলেও এ রোগের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার প্রতিরোধে ও যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য বিস্তারিতভাবে সঠিক তথ্য জানা এবং এ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।