প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১০ :২২

প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার সনাক্তকরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

স্তন ক্যান্সার বিশ্বের বহুল সংক্রমিত একটি ক্যান্সার। এই ক্যান্সার ৪০ বছর বা তার অধিক বয়সী নারীদের মধ্যে দেখা যায়, তবে ৭০ বছরের অধিক বয়সী নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। 

স্তনের লোবিউল বা নালীর অভ্যন্তরীণ কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে স্তন ক্যান্সার হয়। এই অস্বাভাবিক কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। রোগের অগ্রগতির কারণে অ্যাডভান্সড স্টেজে রয়েছে এমন স্তন ক্যান্সারের রোগীদের মৃত্যুর হার বেশি।    

প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণের উপকারিতা 

  • স্তন ক্যান্সার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণের লক্ষ্য হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করা। এই পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারলে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করার সুযোগ থাকে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে একজন রোগীকে পুনরায় সুস্থ করে তোলা সম্ভাবনা থাকে। স্তন ক্যান্সার প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে এবং লোকালাইজড এরিয়াতে থাকলে (যখন স্তন ক্যান্সার শুধুমাত্র স্তনের ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকে) একজন রোগীর প্রথম পাঁচ বছর বেঁচে থাকার হার প্রায় ৯৩%।  
  • প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা তুলনামূলক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এমন ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে করা যেতে পারে, যেমন অস্ত্রোপচার এবং এর পরে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। তবে অ্যাডভান্সড স্টেজের স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা কেমোথেরাপির মাধ্যমে করা হয়, যার প্রচুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
  • একদম শুরুর দিকে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে তা রোগীর মনে অপেক্ষাকৃত কম উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা সৃষ্টি করে, কিন্তু অ্যাডভান্সড স্টেজে ক্যান্সার সনাক্ত হলে দৃশ্যপটটি সম্পূর্ণ উলটা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, একদম প্রাথমিক দিকে ক্যান্সার সনাক্ত হলে তা একজন রোগীর মনে পুনরায় স্বাস্থ্যকর জীবনে ফিরে আসার একটি নতুন আশা তৈরি করে। 

স্ক্রিনিং করানোর পরামর্শ
প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয়ে বহুল ব্যবহৃত ও অন্যতম কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে ম্যামোগ্রাম। চিকিৎসকগণ ৪০-৫৪ বছর বয়সীদের বছরে একবার এবং ৫৫ বছরের অধিক বয়সীদের দুই বছর অন্তর অন্তর একবার করে ম্যামোগ্রাম করানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ম্যামোগ্রাম করার পাশাপশি ক্লিনিক্যাল স্তন পরীক্ষা এবং নিজে ঘরে বসে স্তন পরীক্ষা করলে স্তন ক্যান্সার প্রকট রূপ ধারণ করার আগেই তা সনাক্ত করার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।  

নিজে ঘরে বসে স্তন পরীক্ষা এবং স্তন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ
বর্তমানে, নিজে ঘরে বসে স্তন পরীক্ষা এবং স্তন ক্যান্সারের সম্ভাব্য লক্ষণসমূহ সম্পর্কে সচেতন করার ব্যাপারে নারীদের উৎসাহী করা হয়। লক্ষণসমূহ একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। আপনি যদি আপনার স্তনে নীচের উল্লিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে কোনোটি লক্ষ্য করেন তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-

  • স্তনের বোঁটা উত্থিত হওয়া, চুলকানি বা ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া
  • স্তনের আকার, আকৃতি, তাপমাত্রা ও অবয়বে হঠাৎ পরিবর্তন
  • স্তন বা বগলে নতুন দলা সদৃশের উপস্থিতি যা অনেক দিন ধরে রয়েছে
  • স্তনের টিস্যু পুরু হয়ে যাওয়া
  • স্তনের উপরে ও চারপাশের ত্বকে পরিবর্তন
  • স্তনের বোঁটা বা চামড়া আঁশটে মত হয়ে যাওয়া
  • স্তন লালাভ হয়ে যাওয়া
  • ফুলে যাওয়া
  • জ্বালাপোড়া
  • স্তনের বোঁটা বা স্তনে ব্যথা, মাঝে মাঝে কাঁটা বিঁধে যাওয়ার মত অনুভূতি হওয়া এবং স্তনের বোঁটা থেকে অন্য ধরনের পদার্থের নিঃসরণ 

সচেতনতা বৃদ্ধি, সঠিক তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকা এবং নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে, আমরা এই প্রাণঘাতী ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকতে পারি, যা নারীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে। 


Fighting Cancer Desk
ফাইটিং ক্যান্সার ডেস্ক